যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে মহামারি কাটিয়ে ওঠার সুযোগ, চ্যালেঞ্জও কষ্টসাধ্য

প্রকাশিত: ৮:৪৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৩, ২০২১

মহামারি কাটিয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরতে ভ্যাকসিন প্রয়োগের দ্রুত গতি যুক্তরাষ্ট্রে জন্য একটি ভালো খবর। কিন্তু একজন প্রখ্যাত স্বাস্থ্যবিদ বলছেন, এখনও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে।

এখনও কোটি কোটি আমেরিকান করোনার ভ্যাকসিন নেননি। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের পরিচালক ডা. ফ্রান্সিস কলিন্স সিএনএনকে বলেন, ‘অনেক মানুষ এখনও নিশ্চিত নয় যে ভাইরাসটিকে পেছনে ফেলতে তারা এই অসাধারণ সুযোগে অংশগ্রহণ করবেন কিনা।’

সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন প্রয়োগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, আর তখন ভ্যাকসিনের চাহিদা এর সরবারহকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

দেশের কিছু কিছু জায়গায় ইতোমধ্যেই সে লক্ষণ দেখা গেছে।

সাম্পতিক এক জরিপে দেখা গেছে, অল্প বয়সী আমেরিকান, যাদের মধ্যে অনেকেই সম্প্রতি ভ্যাকসিনের জন্য যোগ্য হয়ে উঠেছেন তারা বয়স্কদের তুলনায় খুব কমই দাবি করেন যে তারা টিকা নিয়েছেন বা নেবেন।

কলিন্স বলেন, ‘আমরা যদি এই ভয়াবহ মহামারি কাটিয়ে উঠতে চাই, তাহলে আমাদের অধিকাংশকেই ভ্যাকসিন নিতে হবে। তা না হলে ভাইরাস বেড়েই চলবে।’

 

জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের ভ্যাকসিনের প্রয়োগ আবার শুরু করতে শুক্রবার সিডিসির ভ্যাকসিন বিষয়ক উপদেষ্টাদের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাব্য ঝুঁকি থাকায় ভ্যাকসিনটির প্রয়োগ স্থগিত করা হয়েছিল।

ভ্যাকসিন প্রয়োগ বাড়াতে কেন্দ্রীয়, অঙ্গরাজ্যের ও স্থানীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা অ্যান্ডি স্ল্যাভিট বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের প্রচেষ্টায় পরিবর্তন এসেছে। এটি এখন তরুণদের দিকে যাচ্ছে যারা করোনাভাইরাস নিয়ে তেমন চিন্তিত নয়।’

 

এক বিবৃতিতে হোগ্যান বলেন, ‘আমরা সুরঙ্গের শেষের আলোটির খুব কাছাকাছি আছি। আপনাদের মধ্যে যারা এখনও ভ্যাকসিন নেননি, তারা দয়া করে যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন নিন। আপনার নিজের জন্য এটা করুন, পরিবারের জন্য এটা করুন, বন্ধুদের জন্য এটা করুন, এবং আমাদের সবার জন্য এটা করুন যেন এই বৈশ্বিক মহামারিকে আমরা পেছনে ফেলতে পারি।’

ajkal

হাজার হাজার আমেরিকান প্রতিদিন করোনায় মারা যাচ্ছেন

অনেক সরকারি কর্মকর্তা মহামারি দ্রুতই শেষ হতে যাচ্ছে বলে বারবার উল্লেখ করছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা এখনও অনেক বেশি।

জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৬২ হাজার ৯০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

৪৩ হাজারেরও বেশি আমেরিকান করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। হাজার হাজার আমেরিকান আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছেন। শুধুমাত্র গত এক সপ্তাহেই ৪ হাজার ৯শ জনের বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

 

ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম পাওয়া ভাইরাসের নতুন ধরন বেশি সংক্রামক

বৃহস্পতিবার গবেষকরা জানান, ক্যালিফোর্নিয়ায় ভাইরাসের যে নতুন দুটি ধরন প্রথম পাওয়া গিয়েছে তা আক্রান্ত ব্যক্তির নাকে দ্রুত নিজেদের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে। তাই মূল করোনাভাইরাসের চেয়ে কেন এগুলো বেশি দ্রুত ছড়ায় তা এ তথ্য থেকে বোধগম্য হয়।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, স্যান ফ্রান্সিসকোর গবেষক ডা. চার্লস চিউয়ের নেতৃত্বে গবেষণা দলটি ক্যালিফোর্নিয়া জুড়ে করোনা পজিটিভ ২ হাজারের বেশি ব্যক্তির নমুনা নিয়ে গভীর সিকোয়েন্স করেছে। তারা দেখতে পান, বি.১.৪২৭/বি.১.৪২৯ ধরনগুলো সেপ্টেম্বরে নেয়া কোনো নমুনায় ছিল না আর জানুয়ারিতে নেয়া নমুনাগুলোর অর্ধেকেই এটি ছিল।

 

করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের ঝুঁকি আরও বেশি

বৃহস্পতিবার বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা সুস্থ হয়েছেন, এমনকি যাদের মৃদু লক্ষণ ছিল তাদেরও মৃত্যুর বেশ ঝুঁকি রয়েছে। করোনা ধরা পড়ার পরবর্তী ছয় মাস পর্যন্ত তাদের আরও চিকিৎসা সেবা দরকার।

গবেষকরা দেখতে পান, যারা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি তাদের চেয়ে যারা ইতোমধ্যে আক্তান্ত হয়েছেন তাদের মৃত্যু ঝুঁকি অসুস্থ হওয়ার এক থেকে ছয় মাস পর্যন্ত ৬০ শতাংশ বেশি। পরবর্তী ছয় মাসে আরও চিকিৎসা সেবা নেয়ার সম্ভাবনাও তাদের ২০ শতাংশ বেশি।

এসব রোগীদের মূল সমস্যা হয় শ্বাসযন্ত্রে। এছাড়া স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা, মাথাব্যথা, ঘুমে সমস্যা, উদ্বেগ, ভয়, ট্রমা, মানসিক চাপ, পাকস্থলিতে সমস্যা, হজমে সমস্যা, ডায়াবেটিস, স্থুলতা প্রভৃতি দেখা যায়। এছাড়া দুর্বলতা ও অবসাদের সমস্যাতেও ভোগেন তারা।

 ajkal

নতুন গবেষণায় তুলে ধরা হলো ভ্যাকসিনের গুরুত্ব

একটি নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, যাদের দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আক্রান্ত হলে তাকে বলা হবে ‘যুগান্তকারী সংক্রমণ’।

এতে বলা হয়, রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১৭ জন কর্মী যারা ফাইজার অথবা মডার্নার দুটি ডোজই নিয়েছেন তাদের মধ্যে মাত্র দু’জনের পরবর্তীকালে ‘যুগান্তকারী সংক্রমণ’ হয়েছে।

মূল ভাইরাসের ভিন্নরকম ধরনগুলোর কারনে ‘যুগান্তকারী সংক্রমণ’ ঘটেছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

গবেষকরা লিখেছেন, ‘ক্লিনিক্যাল লক্ষণ হিসেবে ভ্যাকসিন অকার্যকর হওয়ার উদাহরণ আমরা প্রকৃতভাবে নির্ধারণ করতে পেরেছি।’

তারা লিখেছেন, মার্কিন জনগণকে ভ্যাকসিন দিতে কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্যের জরুরি প্রচেষ্টার গুরুত্বকে এই পর্যবেক্ষণ কোনোভাবেই খাটো করে দেখছে না।

 

সিডিসি পরিচালিত এই গবেষনায় দেখা যায়, নার্সিং হোমগুলোর আট হাজার বাসিন্দা ও সাত হাজার কর্মী যারা ডিসেম্বর থেকে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নিয়েছেন তাদের মধ্যে মাত্র ২২ জনের ‘যুগান্তকারী সংক্রমণ’ হয়েছে। এসব যুগান্তকারী সংক্রমণের দুই তৃতীয়াংশের মধ্যে কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং এদের মধ্যে একজন মারা যান। ওই মৃত ব্যক্তির আগে থেকেই তিনটি গুরুতর শারীরিক সমস্যা ছিল।

সূত্র : সিএনএন