শ্রদ্ধীয় সিরাজ উদ্দিন ছিলেন তালার অনন্য দৃষ্টান্ত

প্রকাশিত: ৩:৩৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২২

বি এম বাবলুর রহমান (তালা-সাতক্ষীরা)
একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আত্মনাথ দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ইতিহাস। সিরাজ উদ্দিন তালার ইতিহাসের এক অধ্যায় তা এখনো মনের অজান্তের্তই উঁকি দেয় হাজারো মানুষের হৃদয়ে।

তথ্য মতে এটি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার আত্মজীবনীর কথা যা না বললেই নয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক গৌরবময় অধ্যায় রচনা করা এই মহান ব্যক্তির স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া অজানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তিনি ২০১১ সালের ৮ মে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট সমাজসেবক রাজনীতিবিদ, কলামিস্ট আঃ ,কাঃ ম: সিরাজ উদ্দিন সরদার। সবার ভালবাসার মানুষ যাকে এক নামেই সকলের চেনা প্রিয় মরহুম আঃকাঃম সিরাজ উদ্দিন সরদার মৃত্যুর তিন দিন আগে জীবনের শেষ বক্তব্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক এক সেমিনারে। সারা টা জীবন তালা উপজেলা কে দিয়ে গেছেন বিনিময়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মেলেনি উপজেলা প্রশাসন ও কোন সংগঠনের পক্ষ থেকে।একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃতের পরেও কোন প্রকার মুক্তিযুদ্ধের সনদ পাইনি এই মহান ব্যক্তি এটা পুরো জাতির জন্য একটি লজ্জষ্কর এবং দুঃখ জনক অধ্যায়। সত্য কথা বলাতে যেখানে মিথ্যা কে প্রাধান্য দেয় বেশি, সেখানে মিথ্যার কাছে সত্য বড়ই অসহায় ও নিরুপায় হয়ে দাড়িয়ে আছে।

একসময় তালা উপজেলায় প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে সিরাজ উদ্দিন সরদার ছিলেন প্রধান আকর্ষণ প্রত্যেকটা ব্যক্তি প্রচার করতেন এই নামটি। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক খুব উচ্চ কন্ঠে বলতেন এ পর্যায়ে আপনাদের সামনে বক্তব্য রাখবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট কলামিস্ট, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ,আঃ,কাঃ,ম,সিরাজ উদ্দিন সরদার।হাজার হাজার পত্রিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই সমস্ত পেপার কাটিং পরিবার টি সংরক্ষণ করে রেখেছে।

সুত্র মতে আরো জানা গেছে মরহুম সিরাজ উদ্দিন সরদার ১৯৭১ সালে মেজর জলিল, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফিন এর নেতৃত্বে ভারতের টাকি ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। পরবরর্তীতে দেশে এসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
এমন কি যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাইরে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করা কালে সিরাজ উদ্দিন সরদার দীর্ঘ সাত-আট মাস এর ভিতরে পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ স্থাপন না করার কারনে সকলের ধারনা ছিল তিনি যুদ্ধে মারা গেছে। দীর্ঘ নয় মাস পরে যুদ্ধ শেষে মাথায় লম্বা লম্বা চুল সহ তিনি বাড়িতে আসে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রেখে আজীবন চুল বড় রাখতেন সেটা তালা বাসি অবগত আছে।বঙ্গবন্ধু কে ভালো বেসে তাকে অনুসরণ করে সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর মতোই একই চশমা পরতেন। ১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান টুকু এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মোড়ল আব্দুস সালাম এর নেতৃত্বে সিরাজ উদ্দিন সরদার খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি রাজাকার ক্যাম্পের সাথে যুদ্ধেও সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করেন। তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা ব্রিজের নিচে পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীদের যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করার সময় তিনি অংশগ্রহণ করেন বলে একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে জানা গেছে।
সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিলেন ১৯৭১ সালে হিন্দু শরনার্থী-রা সিরাজ উদ্দিন এর কাছে তাদের জমির দলিল স্বর্ণালঙ্কার আমানত রেখেছিলেন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অক্ষত অবস্থায় তাদের সমস্ত আমানত ফিরিয়ে দেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ১৯৭০ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তালা উপজেলার জনসভায় এবং তালা- কলারোয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম সৈয়দ কামাল বখ্ত ছাকির আয়োজনে তালা সরকারী কলেজ মাঠে এবং বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার তালার জনসভায় সিরাজ উদ্দিন সরদার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।

মরহুম সিরাজ উদ্দিন যে সর্বজনীন শ্রদ্ধীয় ছিলেন তার বাস্তব উদাহরণ হলো ১৯৮৮ সালের বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তালা উপজেলা সফর করেন রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে যে মানপত্র পাঠ করা হয়েছিল সেই মানপত্র তিনি লিখছিলেন ও পাঠ করেছিলেন। এছাড়া ঝড়ে লণ্ডভণ্ড তালা উপজেলা কে গড়তে রাষ্ট্রপতি এরশাদের জনসভায় বর্ষিয়ান বক্তব্য প্রদান করেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমান, সাবেক অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার এর তালা সফরের অনুষ্ঠানেও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।

তিনি কখনো কোন অন্যায় কে প্রশ্রয় দেয়নি বরং প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার জনগণের সামনে তালা ডাক বাংলায় উপস্থিত এক এমপির বিরুদ্ধে জড়ালো বক্তব্য দিয়েছিলেন। তার মুখ থেকে প্রতিবাদী কথা শুনেছেন সাবেক এক মন্ত্রী নিজেই,সিরাজ উদ্দিন সরদার অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করেননি।লেখক হিসাবে তিনি অসাধারণ লিখেছেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনী সম্পর্কে। তিনি ওয়েস কুরুনির জীবনী, ইমাম মেহেদী আলাই সালাম এর জীবনী,ও দাজ্জালের আত্নপ্রকাশের কথা লিখে গেছেন। তিনি একজন শ্রেষ্ঠ পাঠক ছিলেন তার জীবনে তিনি পড়তেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী। মাওলানা আবুল হামিদ খাঁন ভাসানী, গান্ধীজীর, মাদার তেরেসার, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী। বিশিষ্ট রাজনীতিক নেতৃবৃন্দরা মনে করেন মরহুম সিরাজ সরদার তালা উপজেলার এক ইতিহাস। তালা থানার শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অভিমত বিকল্প সিরাজ সরদার বার বার আসবেন না একবার জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

মরহুম সিরাজ উদ্দিন সরদারের পুত্র মোঃ মামুনুর রশিদ সরদার তার পিতার নাম মুক্তিযুদ্ধের চুড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে তালা – কলারোয়া এমপি মহোদয় এ্যাড, মুস্তফা লুৎফুল্লাহ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।এছাড়া জাতির গর্বিত সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা তার পিতার সহযোদ্ধা,তালা উপজেলা পরিষদের সুযোগ্য চেয়ারম্যান ঘোষ সনদ কুমার, এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করে চলমান মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের গেজেটে নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জান